পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে তথ্য | Facts About West Bengal

পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) সম্পর্কে তথ্য

ভারতের এই রাজ্যে আপনি সব থেকে বেশি ভিখারী দেখতে পাবেন, দেশের সব থেকে বড় রেড লাইট এলাকাও এই রাজ্যেই আছে। আর এখনকার মেয়েরা শুধু দেশেই নয় দুনিয়ার মধ্যে সবথেকে বেশি সুন্দরী। এই রাজ্য হিমালয় পাহাড় থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বৃস্তিত। দুনিয়ার সব থেকে বড় ম্যানগ্রোভ জঙ্গলও এই রাজ্যেই অবস্থিত। এখানে আজও হাতে টানা রিক্সা দেখা যায়।

West Bengal Secret Facts

আমরা কথা বলছি ভারতের একটি সুন্দর রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের বিষয়ে। আজ পশ্চিমবঙ্গের বিষয়ে এমন কিছু আকর্ষিক তথ্যের কথা বলবো যার বিষয়ে আপনি এর আগে কোনোদিন শোনেননি। সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কোন কোন জায়গায় আপনি ঘুরতে যেতে পারবেন এই বিষয়েও জানবেন এখান থেকে।

পশ্চিমবঙ্গ, ভারতের জনসংখ্যার দিক থেকে চতুর্থ বড়ো রাজ্য, এই রাজ্যের জনসংখ্যা ১০ কোটির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এই রাজ্যের আয়তন ৮৮,৭৫২ বর্গকিলোমিটার। এই রাজ্যে শিক্ষিতের পরিমান জনসংখ্যার ৭৮% এর কাছাকাছি। ভারতের এই রাজ্যের আসে পাশে ওড়িশা, ঝাড়খন্ড, বিহার, আসাম, ও সিকিম রাজ্য অবস্থিত। আর আন্তর্জাতিক দিক দিয়ে এই রাজ্যের সীমানায় বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান অবস্থিত।

পশ্চিমবঙ্গের নামকরণ

অনেকেই ভাবতে পারে যে পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) নাম পশ্চিমবঙ্গই কেন, যখন এই রাজ্যটি ভারতের পূর্বদিকে অবস্থিত বা পূর্ববঙ্গ নামের কোনো জায়গাও নেই তাহলে এই রাজ্যের নাম পূর্ববঙ্গ নয় কেন? আসলে স্বাধীনতার পর বাংলার একটি বড় ভাগের নাম ইস্ট পাকিস্তান দেয়া হয়েছিল। যার জন্য ভারতের ভাগের রাজ্যটির নাম পশ্চিমবঙ্গ দেয়া হয়। সপ্তম শতাব্দীর পর এখানকার মাতৃভাষা বাংলার জন্য এই জায়গার নাম বাংলা করে দেয়া হয়। মহান সমাজ সেবক গোপাল কৃষ্ণ গোখলে একটি কথা বলেছিলেন যে বাংলার মানুষ, মানে বাংলা আজ যেটা ভাবে ভারত সেটা কাল ভাববে। এটা এইজন্য কারণ বাংলার লোকের চিন্তাধারাটি আলাদা, বাংলার লোক সবসময়ই অনেক দূরের কথা ভেবে চলে।

পশ্চিমবঙ্গের মহান ব্যাক্তিগন

এই রাজ্যে এমন কিছু মহান ব্যাক্তি জন্ম নিয়েছেন যাদের জন্য আজ গোটা বিশ্বে ভারতের এক আলাদাই পরিচয় আছে। স্বামী বিবেকানন্দ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, রাজা রামমোহন রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রামকৃষ্ণ পরমহংস, ক্ষুদিরাম বসু এবং মহান ক্রিকেটের সৌরভ গাঙ্গুলির জন্ম পশ্চিমবঙ্গেই হয়েছে। পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত জাদুগর পি.সি.সরকারও পশ্চিমবঙ্গেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। অস্কার সমেত অন্যান্য পুরস্কারে সম্মানিত মহান ফিল্ম মেকার সত্যজিৎ রায়ও পশ্চিমবঙ্গেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কুমার সানু, শ্রেয়া ঘোষাল, অরিজিৎ সিং এর মতো গায়করা পুরো দেশে পশ্চিমবঙ্গের নাম উজ্জ্বল করছেন। বাংলার লোকজনের ফুটবলের প্রতি এক আলাদাই ভালোবাসা আছে। দেশের প্রথম ফুটবল ক্লাব মোহনবাগান পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতাতেই স্থাপন করা হয়, সঙ্গে ভারতের সব থেকে বড়ো ফুটবল ময়দান কলকাতাতেই অবস্থিত, যা বিবেকানন্দ যুব ভারতীয় স্টেডিয়াম বা সল্টলেক স্টেডিয়াম নামে পরিচিত। রাজনীতির কারনে পশ্চিমবঙ্গে কোনো ইন্ডাস্ট্রিস ঠিক ভাবে গড়ে ওঠেনি, সম্ভবত এই কারণেই দেশের সব থেকে বেশি ভিখারী পশ্চিমবঙ্গে দেখতে পাওয়া যায়।

পশ্চিমবঙ্গের চাষবাস এবং শিল্প

ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ধান উৎপাদনে ১ নম্বর রাজ্য, এর সঙ্গে এখানে আপেল, কমলালেবু, আনারস, আদা ও এলাচ চাষও হয়। এই রাজ্য হাতে বোনা তাঁতের জন্যও বিখ্যাত। বাংলার হস্তশিল্পের কারিগর দ্বারা বানানো যেকোনো জিনিস যে কাউকে আকর্ষিত করে। বাংলায় তাঁতের শাড়ি অধিক মানুষের পছন্দ, এখানকার মহিলারা যখন তাঁতের শাড়ি পরে তৈরী হয় তখন দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। এমনিতেই বাঙালি মহিলাদের সৌন্দর্যের চর্চা পুরো দেশেই হয়ে থাকে। সুস্মিতা সেন, মৌনী রয়, বিপাশা বসু, রানী মুখার্জীর মতো নামিদামি বলিউড অভিনেত্রী বাংলাতেই জন্মগ্রহণ করেছেন। এই রাজ্যের কলা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য যোগদান রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের রেড লাইট এলাকা

পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে গৌরব এখানকার রাজধানী কলকাতা। পশ্চিমবঙ্গ ক্রাইম এর দিক থেকেও অনেক এগিয়ে, ভোটের পর মার্ডার এর মতো ক্রাইম এখানে অনেক বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে অনেক ধরণের স্ক্যামও এখানে অধিক পরিমানে হয়। দেশের সব থেকে বড়ো রেড লাইট এলাকাও পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত, যেটি পুরো এশিয়ার মধ্যে সব থেকে বড়ো রেড লাইট এলাকা, এই এলাকার নাম সোনাগাছি। এই নামটা আপনি হয়তো আগেও শুনেছেন। এখানে প্রায় ১৬০০০ মহিলা দেহব্যবসা এর সঙ্গে যুক্ত। অনেক মহিলাদের তো এখানে জোর করে বন্দি করে দেহব্যবসা করানো হয়, যারা চাইলেও এখান থেকে পালাতে পারেনা।

পশ্চিমবঙ্গের মার্তৃভাষা বাংলা

পশ্চিমবঙ্গের লোকজন নিজেদের মার্তৃভাষা বাংলা কে নিয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল। এই ভাষার জন্যই ১৯৭১ সালে ইস্ট পাকিস্তান স্বাধীন হয় এবং বাংলাদেশও গড়ে ওঠে। দুনিয়াতে ২১০ মিলিয়নেরও বেশি লোক বাংলায় কথা বলেন। এই বাংলা পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের মানুষের মার্তৃভাষা। একইরকম ভাবে আসাম এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সেকেন্ড অফিসিয়াল ভাষা হলো বাংলা। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, ইস্ট আফ্রিকার দেশ সিরিয়া লিওনে ২০০২ সালে বাংলা ভাষাকে নিজেদের দেশের অফিসিয়াল ভাষা হিসাবে নিযুক্ত করেছিল। ২১ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার সংরক্ষণের জন্য ঢাকা ইউনিভর্সিটিতে “দা ল্যাঙ্গুয়েজ মোমেন্ট” এর শুরু করা হয়। এই আন্দোলনের জন্য বেশ কিছু যুবকের মৃত্যুও হয়েছিল। এই আন্দোলন ও বাংলা ভাষার প্রতি মানুষের প্রেম দেখে ইউনেস্কো ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করেন।

পশ্চিমবঙ্গের অনুষ্ঠান

পশ্চিবঙ্গে সারা বছরই অনেক ধরনের অনুষ্ঠান ও পরব আয়োজন করা হয়। যেখানে পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে বড় উৎসব হলো দুর্গাপূজা। এই সময় সারা পশ্চিমবঙ্গকে আলোয় আলোকিত করা হয়। জায়গা জায়গায় মেলার আয়োজন করা হয়। মানুষজন মা দুর্গার পূজা করেন। এছাড়া কালীপূজা, সরস্বতী পূজা, লক্ষ্মী পূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা, নববর্ষ, দলপূর্নিমা, রথযাত্রা, জন্মাষ্টমী, রাখিপূর্নিমার মত অনেক উৎসব পশ্চিমবঙ্গে ধুমধাম করে পালন করা হয়। এইসব উৎসবের জন্যই পশ্চিমবঙ্গের লোকনৃত্য ও সংস্কৃতির ঝলকও আপনি দেখতে পাবেন। ছৌ নাচ, লাঠি নাচ, সাঁওতাল নাচ, গম্ভীরা নাচ, ঠুমরী নাচ এছারা আর ও অনেক নাচ,এই নাচ গুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়।

পশ্চিমবঙ্গের খাওয়া দাওয়া

খাওয়া দাওয়ার দিক থেকেও বাংলার মানুষজন সকলের আগেই থাকেন, বাংলার রসগোল্লা এই দুনিয়ার কার পছন্দের নয়। ১৮৬৮ সালে কলকাতার নবীন চন্দ্র দাস রসগোল্লার আবিষ্কার করেন, যা দেশের তো বটেই বিদেশের মানুষেরও খুব পছন্দের। এছাড়া ছানার পায়েস, চমচম, কালোজাম এর মতো মিষ্টির নাম গোটা দেশ জুড়ে, এছাড়াও ডালের কচুরি, ধোকার ডানলা, মোচার ঘন্ট, শুক্তো, লুচি ও ছোলারডাল, চপ, কাটলেট, বেগুনি, ফুচ্কা, মাছ ভাজা, মাছের চপ, এছাড়াও মাছের প্রায় ১০০ রকমের উপর খাবার শুধু বাংলাতেই পাওয়া যায়।

পশ্চিমবঙ্গের টুরিস্ট প্লেস

চলুন, এবার আপনাদেরকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন টুরিস্ট প্লেস সম্পর্কে বলি। সবার আগে কথা বলা যাক সুন্দরবন নিয়ে, এটা দুনিয়ার সব থেকে বড়ো ম্যানগ্রোভ জঙ্গল, সুন্দরবনকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ঘরও বলা চলে, এখানে আপনি জঙ্গল সফরের আনন্দও নিতে পারেন, জঙ্গলের মধ্যে রাত কাটানোর আনন্দও নিতে পারেন, তবে একটু সাবধানে। পশ্চিমবঙ্গে এছাড়াও রাষ্ট্রীয় উদ্যানও দেখতে পাবেন। যেমন, সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্ক, বল্লভপুর ওয়াইল্ডলাইফ সেঞ্চুরি, বক্সা টাইগার রিসার্ভ এবং জলদাপাড়া ন্যাশনাল পার্কেও আপনি ঘুরতে যেতে পারেন।

দেশের সব থেকে উঁচু রেল স্টেশন পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং শহরে অবস্থিত, এই স্টেশনের নাম ঘুম (Ghum) স্টেশন, যা সমুদ্রতল থেকে ২২৫৮ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। যদিও এই রেল স্টেশন একটি টয়ট্রেন স্টেশন। বাংলা ঘোরার সময় টয়ট্রেনের কিন্তু একবার চড়তেই হবে।

যদি আপনার ট্র্যাকিংএ সখ থাকে তো সান্দাকফু পাহাড়ের উপর ট্র্যাকিং এর জন্য যেতে পারেন, এটা পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে উঁচু পাহাড়ের একটি। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতাতেও অনেক দেখার মতো ঘোরার জায়গা আছে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ঘোরার জন্য প্রতিবছর দেশ বিদেশ থেকে বহু মানুষজন কলকাতা আসেন। এছাড়াও শহীদমিনার, সাইন্সসিটি, আলিপুর চিড়িয়াখানা, হাওড়া ব্রিজ, বেলুড় মঠ, দক্ষিনেশ্বর ও কালীঘাটের কালীমন্দিরের মতো কোলকাতার অনেক জায়গায় ঘুরতে যেতে পারেন।

শিলিগুড়িকে গেটওয়ে অফ নর্থ ইস্টও বলা হয়, এটা পশ্চিমবঙ্গের একটি দর্শনীয় হিলস্টেশন। পশ্চিমবঙ্গের কালিংপং বৌদ্ধ মঠের জন্য বিখ্যাত। দিঘার সমুদ্র সৈকতও সকলকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গাসাগর সেই জায়গা যেখানে গঙ্গা নদী সমুদ্রের সঙ্গে গিয়ে মেশে। কোচবিহার রয়েল প্যালেসের জন্য বিখ্যাত। মুর্শিদাবাদে আপনি হাজারদুয়ারি প্যালেসের দর্শন করতে পারেন। দার্জিলিং এর চায়ের বাগান ও উঁচু নিচু পাহাড়ের রূপ আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থাকতেন,যেখানে এখন একটি মিউজিয়াম তৈরি হয়েছে। এছাড়া পুরুলিয়া, বর্ধমান, বিষ্ণুপুর, বকখালি, মায়াপুর, হুগলি, তারাপীঠ, মন্দারমণি, জয়পুর জঙ্গল, তারকেশ্বরের মতো জায়গায় ঘুরতে যেতে পারেন।

যদি আপনি পশ্চিমবঙ্গ ঘোরার প্ল্যান করে থাকেন তো এই সমস্ত জায়গা গুলি আপনার মেন লিস্টে রাখা অবশ্যই প্রয়োজন। তো বন্ধুরা এই ছিল ভারতের একটি সুন্দর রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, আশা করবো আপনি এই রাজ্যের বিষয়ে জেনে খুব খুশি হয়েছেন।

Leave a Comment