প্রেমানন্দ জি মহারাজের জীবনী । Premanand Ji Maharaj Biography

প্রেমানন্দ জি মহারাজ (Premanand Ji Maharaj)

আপনারা যারা নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন তারা ফেইসবুক ইনস্টাগ্রামে ভিডিও স্ক্রল করতে করতে কোনো এক সময় একজন হলুদ বস্ত্রধারী মাথায় হলুদ রঙের তিলক আঁকা পৌর মহারাজের প্রবচনের ভিডিও দেখে থাকবেন। আমরা এখন বৃন্দাবন নিবাসী প্রেমানন্দ মহারাজের (Premanand Ji Maharaj) জীবনী নিয়ে কথা বলতে চলেছি।

Premanand Ji Maharaj

বর্তমান যুগে অনেক মহাপুরুষরা ঈশ্বরের বাণী প্রচার করে মানুষের মনে ঈশ্বরের ভাবনা জাগরিত করে। আজকালকার যুগের এমনই একজন মহাপুরুষ হলেন প্রেমানন্দ মহারাজ।

প্রেমানন্দ জি মহারাজের জন্ম এবং পরিবার

প্রেমানন্দ জি মহারাজের (Premanand Ji Maharaj) জন্ম হয় ভারতের উত্তরপ্রদেশের কানপুর জেলার, অখরী নামে এক প্রত্যন্ত গ্রামে। প্রেমানন্দ মহারাজের জন্ম হয় এক সাধারণ গরিব ব্রাহ্মণ পরিবারে। মহারাজের পরিবারের লোকজন ঈশ্বরপ্রেমী ছিলেন তারা সকলেই ভগবানের সেবায় ব্রতি থাকতেন। প্রেমানন্দ মহারাজের ঠাকুরদা, নিজেও একজন সন্ন্যাসী ছিলেন।

প্রেমানন্দ মহারাজের বাবা হলেন শ্রী শম্ভু কুমার পান্ডে ও মাতা হলেন শ্রীমতি রমা দেবী পান্ডে। পরিবারের সাথে সাধু সন্তের নিবিড় যোগাযোগ থাকায় ছোটবেলা থেকেই প্রেমানন্দ মহারাজের মনে ভগবানের প্রতি গভীর ভক্তিযোগ তৈরী হয়েছিল।

শ্রী প্রেমানন্দ মহারাজের শৈশব

শুদ্ধ বস্ত্রে তিলক রঞ্জিত মাথায় তিনি নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের ধার্মিক গ্রন্থ পাঠ করতেন। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় শৈশব অবস্থাতেই প্রেমানন্দ মহারাজ হিন্দু শাস্ত্রের ১০ থেকে ১৫ রকমের বিভিন্ন ধরনের চালিশার শ্লোক মুখস্থ করে ফেলেছিলেন। মহারাজের যখন মাত্র পাঁচ বছর বয়স তখন থেকেই শ্রীমদভাগবত গীতা ও শ্রী সুখসাগর পরা শুরু করেন।

মহারাজ নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় ঈশ্বরের খোঁজে আধ্যাত্মিক জীবনযাপন করার জন্য নিজের মনস্থির করেন। বাল্য অবস্থায় প্রেমানন্দ মহারাজের মনে বিচিত্র খেয়াল আসতো, তার মনে হতো জগত সংসারে সবাই কোন না কোন একদিন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে। তাহলে এই মায়ার পৃথিবীতে তার সর্বশেষ সঙ্গী কে হবে? এই সমস্ত ভেবে শেষ পর্যন্ত মহারাজ জগতের মায়া ত্যাগ করে, নিজেকে ভগবানের সেবায় ব্রতী হওয়ার সন্ন্যাস ধর্মের দীক্ষা নিয়ে সন্ন্যাসী জীবনযাপন করার সিদ্ধান্ত নেন।

তারপর একদিন মহারাজ তার মাকে মনের সমস্ত কথা খুলে বলেন। মহারাজ মাত্র ১৩ বছর বয়সে সংসারের মোহ মায়া ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়ে যান।

প্রেমানন্দ জি মহারাজের সন্ন্যাস গ্রহণ

প্রেমানন্দ মহারাজ গৃহ ত্যাগ করার পর সন্ন্যাস জীবনে দীক্ষা নেওয়ার আগে তাকে ব্রহ্মচর্যে দীক্ষা নিতে হয়। ব্রহ্মাচর্য অবস্থায় প্রেমানন্দ মহারাজের নাম হয় আনন্দ স্বরূপ ব্রহ্মচারী। এরপর মহারাজ সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষিত হন এবং সন্ন্যাসী জীবনে মহারাজের নাম হয় স্বামী আনন্দাশ্রম।

প্রেমানন্দ জি মহারাজ ঈশ্বরের সানিধ্য পাওয়ার জন্যে নিজেকে কঠিন তপস্যায় নিয়োজিত করেন। দিনের বেশিরভাগ সময় তিনি একান্ত এবং নিরিবিলিভাবে কাটাতে পছন্দ করতেন। খুদা মেটানোর জন্য তিনি অন্ন ভিক্ষাও করতেন। প্রেমানন্দ মহারাজ গঙ্গা নদীকে তার দ্বিতীয় মা মনে করতেন। তাই তিনি ক্ষুদা,অন্ন, বস্ত্র জলের পরোয়া না করে, কখনো তিনি বেনারস তো কখনো তিনি হরিদ্বারের গঙ্গার ঘাটে ঘাটে ঘুরে বেড়াতেন।
প্রেমানন্দ জি মহারাজ বেনারসের ঘাটে গঙ্গার তীরে অশথ্য গাছের তলায় বসে ভগবান শিব মা গঙ্গার নাম জপ করতেন। হঠাৎ করে তার মনে একদিন বৃন্দাবন যাওয়ার ইচ্ছা জাগে।

শ্রী প্রেমানন্দ মহারাজের বৃন্দাবন গমন

মহারাজ নিত্যদিনের মতো গঙ্গা তীরে তুলসী ঘাটে বসেছিলেন। তখন একজন অপরিচিত সাধু আসেন ও বলেন রাসলীলার অনুষ্ঠান করার জন্য বৃন্দাবন থেকে শিল্পীরা এসেছেন। তারা এখন পুরো একমাস ধরে রাসলীলা অভিনয় করবে। চলুন আমরা দুজনে মিলে গিয়ে দেখে আসি এই সুযোগ বারবার আসবে না। মহারাজ তখন সাধু টিকে বলেন আপনার যাওয়ার হলে আপনি যান আমি যাব না। সাধুটি অনেকবার বলার পরে মহারাজের মনে হয় হয়তো এটা ভোলানাথের ইচ্ছে। সেখানে গিয়ে মহারাজ চৈতন্য লীলা দেখে খুবই আনন্দিত হন। এরপর রাতের বেলা মহারাজ কে আর ডাকতে যেতে হয়নি মহারাজ আগের থেকে গিয়েই মঞ্চের সামনে বসে ছিলেন চৈতন্য লীলা ও রাসলীলা দেখার জন্য। এরপর টানা এক মাস মহারাজ প্রতিদিন রাসলীলা দেখতেন ও সেই লীলা দেখে আনন্দ এর সাথে ফিরতেন। এবং দেখতে দেখতে একমাস কেটে যায়। তারপর মহারাজ ভাবতে থাকেন যে এরপর আমি কিভাবে রাসলীলা দেখব এই নিয়ে মহারাজের মনে হাহাকার সৃষ্টি হয়। তারপর মহারাজ রাসলীলা দলের সঞ্চালকের কাছে গিয়ে বলেন আপনাদের সাথে আমাকে নিয়ে যাবেন? আমি শুধু আপনাদের রাসলীলা দেখব তখন সঞ্চালক বলেন,আপনি একবার বৃন্দাবনে তো আসুন। একবার বৃন্দাবনে এলে দেখবেন বাঁকে বিহারী আপনাকে আর যেতে দেবে না।

এই ঘটনার পরে মহারাজের মনে সব সময় বৃন্দাবন যাওয়ার বাসনা জাগতে থাকে। আমি বৃন্দাবন যাব, আমাকে বৃন্দাবন যেতেই হবে। একবার ভাবুন কাল পর্যন্ত যে মহারাজ ভগবান ভোলানাথের নিত্য পূজা করত এবং ভজন কীর্তন নিয়ে একান্তভাবে নিরিবিলি জীবন কাটাতেন। আজ সেই মহারাজ বৃন্দাবন যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। তাহলে সহজেই অনুমান করা যায় শুধুমাত্র ভগবানের অসীম কৃপা ছাড়া এসব কিছু সম্ভব হতো না।

তারপর মাঝে অনেক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর মহারাজ একদিন বৃন্দাবন গিয়ে পৌঁছায়। বৃন্দাবন গিয়ে শুরুর দিকে মহারাজ বৃন্দাবন ধাম পরিক্রমা করতেন এবং বাকি বিহারীর রূপ দর্শন করতেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দিকে চেয়ে দেখতে দেখতে মহারাজ হঠাৎ করে ফুুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকেন। প্রেমানন্দ মহারাজের এমন রূপ দেখে মন্দিরে আশা আরো অন্যান্য ভক্তরা সবাই অবাক হয়ে যান। ব্যাপারটা দেখে পুরো মন্দির প্রাঙ্গণে হইচই পরে যায়। ভক্তরা বাবাকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কানাঘুশো শুরু করে দেয়। দাড়িওয়ালা জটাধারী এক মহারাজ কেমন ভগবানের প্রেমের মোহিত হয়ে অশ্রু বিসর্জন করছে। এইভাবে কিছুক্ষণ সময় কাটতে না কাটতে মহারাজের চারপাশে অজস্র ভিড় জমে যায়। কেউ মহারাজের গলায় মালা পরিয়ে দেয় আবার কেউ মহারাজের চরণ স্পর্শ করে আশীর্বাদ নেয়।

প্রেমানন্দ জি মহারাজের বানী

প্রেমানন্দ মহারাজ তার কঠিন সাধনার দ্বারা উপলব্ধি করা জ্ঞান প্রবচন মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেন। মহারাজের মত অনুযায়ী মানুষ তার কর্ম অনুসারে ফল ভোগ করে। যেমন – ভালো কর্মের মাধ্যমে মানুষ পুণ্য অর্জন করে এবং খারাপ কর্মের মাধ্যমে মানুষ পাপ সঞ্চয় করে। তাই মানুষকে খারাপ কর্মের ফল যুগের পর যুগ ভোগ করতে হয়। তাই কর্মফলের এই বেড়াজাল থেকে একমাত্র মুক্তির উপায় হলো প্রভুর নাম জপ করা এবং প্রভুর প্রতি অনুগত হওয়া।

প্রেমানন্দ মহারাজের কঠিন রোগ

অনেকেই জানেন হয়তো প্রেমানন্দ মহারাজের দুটো কিডনি বিগত ১০-১৫ বছর আগে থেকে গভীর রোগে নষ্ট হয়ে যায়। মহারাজ কে অনেক ভক্ত কিডনি দেওয়ার জন্য রাজি হলেও মহারাজ ভক্তদের থেকে কিডনি নিতে মানা করে দেন। মহারাজ বলেন কারুর থেকে কিডনি নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই আমি পুরোপুরিভাবে সুস্থ। শরীর যতদিন চলবে ততদিন সেভাবেই চলবে আমি আমার সুখের জন্য অপরকে কষ্ট দিতে কখনোই চাইবো না। অন্যকে কষ্ট দিয়ে আমি সুখ অর্জন করতে পারব না এর থেকে আমার মরে যাওয়া ভালো।

মহারাজ যখন রামকৃষ্ণ মিশন হসপিটালে চিকিৎসা করার জন্য যায় তখন ডাক্তার তাকে বলে বাবা আপনি দু থেকে তিন বছর সর্বাধিক আপনি ৫ বছরই বাঁচবেন। কিন্তু ভগবানের কৃপায় ১৮-১৯ বছর হয়ে গেছে মহারাজ এখনো পর্যন্ত সুস্থ রয়েছে। কিছুদিন আগে মহারাজের কাছে ক্রিকেটের বিরাট কোহলি (Virat Kohli) ও অভিনেত্রী অনুষ্কা শর্মা (Anushka Sharma) গিয়েছিলেন তাদের মেয়েকে নিয়ে মহারাজের দর্শন করতে এবং আশীর্বাদ নিতে।

Leave a Comment