আফরান নিশোর জীবনী । Afran Nisho Biography

আফরান নিশো:

একজন অভিনেতা হিসেবে আফরান নিশো (Afran Nisho) কতটা উঁচু মানের, সেটা তার অভিনীত সকল নাটকের মাধ্যমে প্রমান হয়েছে। প্রাণবন্ত এবং বৈচিত্র্যময় অভিনয় করে তিনি খুবই অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের দর্শক মহলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে নিয়েছেন। কমেডি, রোমান্টিক, অ্যাকশন, নেগেটিভ রোল সব ধরনের ক্যাটাগরিতে সমান পারদর্শী হওয়ার কারণে অনেক সময় বাংলাদেশের প্রধান প্রধান উৎসব গুলোতে তার একচেটিয়া রাজত্ব লক্ষ্য করা যায়।

afran nisho

পর্দার সামনে দর্শকরা যেমন তাকে দেখতে কাকের চোখের মত তাকিয়ে থাকে, তেমনি আবার পর্দার আড়ালে তাকে পেতে নির্মাতাদের অধীর অপেক্ষা করতে হয়। মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও আফরান নিশো সিডিউল পাওয়া তাদের জন্য হয়ে যায় দুষ্কর কাজ। আজকের এই জনপ্রিয় অভিনেতা হওয়ার পেছনে আফরান নিশোর রয়েছে শত কাঠখড় পোড়ানোর গল্প। আমাদের আজকের এই নিবন্ধে থাকছে আফরান নিশোর ছোটোবেলা থেকে শুরু করে তার অভিনেতা হয়ে ওঠার গল্প এবং একজন সফল অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রমান করার নানান অজানা তথ্য। জনপ্রিয় এই অভিনেতার জীবনের গল্প জানতে আমাদের এই নিবন্ধটি পড়তে থাকুন শেষ পর্যন্ত।

আফরান নিশোর পরিচয়:

আফরান নিশোর আসল নাম হচ্ছে আহম্মেদ ফজলে রাব্বি। তিনি আবার নিশো নামেও পরচিত। এই অভিনেতা ৮ই ডিসেম্বর ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের ঢাকায় জন্ম গ্রহণ করেছেন। নিশোর বাবা মো. আবদুল হামিদ মিয়া হলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের সদস্য ও ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ একজন সম্পাদক ছিলেন। তিনি ফুসফুসে ক্যানসারজনিত রোগে ভুগে ১লা অক্টোবর ২০২০ তে মৃত্যুবরণ করেন। নিশোর একটি ভাই ও একটি বোন রয়েছে। আফরান নিশো তার এসএসসি কমপ্লিট করেছেন ধানমন্ডি সরকারি বয়েজ স্কুল থেকে। ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেন।

আফরান নিশোর ক্যারিয়ার:

শোবিজে কাজ করা অনেক অভিনেতার মতো নিশোর ছোটকালের স্বপ্ন ছিল না যে ভবিষ্যতে তিনি একজন অভিনেতা হবেন। কিন্তু তিনি পুরোপুরি সাবালক হবার আগেই তিনি মিডিয়া জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০০০ সাল থেকে নিশো প্রথমে বিভিন্ন বুটিক হাউজের স্টিল ফটো মডেল হিসেবে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেন। পরে কিছুদিন রাম্পেও কাজ করেছেন এবং শেষপর্যন্ত টেলিভিশন এর টিভিসিতে কাজ করা শুরু করেন।

২০০৩ সালে অমিতাভ রেজার বিজ্ঞাপন চিত্রে কাজ করার মাধ্যমে শুরু হয় তার মূল শোবিজ যাত্রা। এরপর আরো নির্মাতার সঙ্গে নানারকম কাজ করেছেন নিশো। এরপরে গাজী শুভ্র, গোলাম হায়দার, কিসুল কিরণ মেহেদী সহ অন্যান্য খ্যাতনামা অনেক পরিচালকের বিজ্ঞাপনে তিনি সফল ভাবে কাজ করেছেন। ২০০৬ সালে তিনি গাজী রাকায়েতের পরিচালনায় ঘর ছাড়া নাটকের মধ্য দিয়ে টিভি নাটকে অভিষেক হয় নিশোর। সেই থেকে পথচলা শুরু আর কখনোই পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক দুর্দান্ত নাটক উপহার দিয়ে তিনি সকলের নজর কেড়েছেন এবং দর্শকদের মন জিতেছেন।

নাটকের পাশাপাশি তিনি বেশ কয়েকটি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছেন। ২০১২ সালের শিমুল হায়দারের পরিচালনায় এবং ইমরান ও পূজার গাওয়া “দূরে দূরে” গানের মিউজিক ভিডিওতে নিশো অভিনয় করেছিলেন উর্মিলার বিপরীতে। তার এই মিউজিক ভিডিওটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে প্রথম দিনেই ইউটিউবে এর ভিউ ১ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। এমনকি আফরান নিশো এখনও এই গানটির জন্য আলোচিত হয়ে আছেন। এর মাধ্যমে তিনি দর্শকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। এখন YouTube-এ এই মিউজিক ভিডিওটি ৭৪ মিলিয়ন ভিউস সংগ্রহ করেছে এবং আশা করছি ভবিৎষতে এটি আরো ভিউস অর্জন করবে।

তারপর থেকে তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যে অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দিয়ে সকলের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। এর পেছনে আরেকটি বড় কারণ হল তার বাস্তবধর্মী অভিনয়। নিশো এমনই একজন অভিনেতা যিনি অভিনয়ের সময় একদম অভিনয় এর ভিতরে ঢুকে গিয়ে কাজ করতে পারেন। তাঁর অভিনয় দেখে আপনার কখনো মনে হবেনা যে তিনি অভিনয় করছেন। মনে হবে একদম বাস্তব একটা কাহিনী দেখছি।

তাবে তার জনপ্রিয়তার কারণে তাকে নাটক এবং বিজ্ঞাপনে অভিনয় করানোর জন্য অনেক নির্মাতাদেরকে সিডিউল হাতে অপেক্ষা করতে হয়। প্রতিটি চ্যানেলে তার ধারাবাহিক নাটক রয়েছে, এমনকি ঈদের সময় তিনি একচেটিয়া বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করে থাকেন। কমেডি, রোমান্টিক, অ্যাকশন, নেগেটিভ রোল কিংবা থ্রিলধর্মি সব ধরনের ক্যাটাগরিতেই সমানতালে অভিনয় করে চলেছেন চমৎকারী এই অভিনেতা। তিনি একমাত্র অভিনেতা যাকে দর্শকরা বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখেছেন হোক সেটা গ্রামের সহজ-সরল যুবক কিংবা একজন মাছ ওয়ালার চরিত্র, একজন হকারের, ফেরিওয়ালার চরিত্র, একজন বাধ্য প্রেমী বা বাধ্য স্বামী, একজন পাগলের চরিত্র কিংবা গ্যাং লিডার সব ধরনের চরিত্রে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন এই অভিনেতা। নিশো অভিনীত উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ হচ্ছে ইডিয়টস, শুধু তোর জন্য, তুমি না থাকলে, সংসার, কমলা সুন্দরী, নিখোঁজ ভালবাসা, হাওয়াই শহরের গল্প, ডাইভোর্স, এক্স স্কয়ার, হার্টবিট, গুলবাহার, কমলার বনবাস, অনুভবে এবং খুব জনপ্রিয় নাটক বুকের বা-পাশে ইত্যাদি।

সব মিলিয়ে তিনি এখন পর্যন্ত ২০০ টিরও বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন এবং একাধারে টেলিফিল্ম, শর্ট ফিল্ম, এবং অনেকগুলো TVC তে অভিনয় করেছেন। এগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে মনে পড়ে ব্রেকআপ স্টরি, ভুতের ভ্যালেন্টাইন, ট্রাম্পকার্ড, গুলবাহার এরকম আরো কিছু নাটক এবং টেলিফিল্মের কথা। আজও সমানভাবে জনপ্রিয় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন আফরান নিশো। তিনি ভালোবাসা দিবসে x-boyfriend এবং x-girlfriend নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের প্রশংসা অর্জন করেছেন। এর আগে “ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প” নাটক এর মাধ্যমেও নিশো বাংলাদেশের সব মানুষের ভালোবাসার পাত্র হয়ে যান।

নিশোর অভিনয়ের ধরণ:

নিশো সবসময় বাস্তবধর্মী অভিনয় করতে পছন্দ করেন, এমনকি শুধু একটি চরিত্রে নয় বরং তিনি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে কাজ করতে চান। নিশোকে চলচ্চিত্রে এখনও দেখা যায়নি এর প্রধান কারণ হচ্ছে একটাই, নিজের অভিনয় নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন নিশো আর তার স্বপ্ন হল একদম বাস্তব সব ধরনের ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে কাজ করতে চান তিনি, কোন একটি চরিত্রে নয় বরং বহুমাত্রিক চরিত্রে অভিনয় করতে চান। যা একদম সম্পূর্ণ ন্যাচারাল বা ইউনিক হওয়া চাই কোন কপি স্ক্রিপ্ট নয়, এই একটি কারণে এখন পর্যন্ত অনেক মুভির অফার ফিরিয়ে দিয়েছেন নিশো। তবে আমরা খুবই আশাবাদী যে খুব শীঘ্রই আমরা তাকে ভিন্নধর্মী কোন চরিত্রে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দেখতে পাবো।

নিশোর সম্পর্ক:

টানা চোদ্দ বছর প্রেম করার পর ভালোবাসার মানুষ তৃষাকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। পারিবারিক ভাবে ২০১১ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন এই দম্পতি। বিয়ের প্রায় সাড়ে তিন বছর পর তাদের ঘর আলোকিত করে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়েছে, তাদের পুত্র সন্তানের নাম রেখেছেন নির্ভান। অসাধারণ অভিনয় এর জন্য তিনি বেশ কয়েকবার সেরা অভিনেতা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। সেই সাথে অর্জন করে নিয়েছেন কিছু পুরস্কার এবং সম্মানও।

প্রয়াত জনপ্রিয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদীকে নিজের আইডল মনে করেন তিনি। অভিনেতা হিসেবে সবার মাঝে টিকে থাকতে চান আফরান নিশো। তিনি চান তাকে যেনো সবাই একজন ভাল পারফর্মার হিসেবে ভালোবাসে। তিনি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত অভিনয় করতে চান শুধুমাত্র তার দর্শকদের জন্য। নিশোর অভিনয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে তার ব্যক্তিত্ব তার একটা নিজস্ব ব্যক্তিত্ব রয়েছে। নিশো কারোর মত নয় নিশো শুধু তার নিজের মতো। আফরান নিশোর ভক্ত বাংলাদেশে এক কথায় অগণিত যারা তাকে মন উজার করে ভালবাসেন। আফরান নিশো তাদের সাড়া হিসেবে ফেসবুকে লিখেছিলেন “ভাবছি প্রতিমাসে কোন এক ভক্তের পরিবারের সঙ্গে সারাদিন সময় কাটাবো খাবো দাবো আলাপ মজার করে ওই পরিবারকে সময় দেবো“।

Leave a Comment